শিল্পী সুভাষ শিণ্ডের অন্তর্বেদনা

পারির স্বেচ্ছাকর্মী সংকেত জৈন স্থির করেছেন সমগ্র ভারতবর্ষের অন্তত তিনশটি গ্রামে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রতিবেদন তৈরি করবেন এবং একই সঙ্গে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করবেন: গ্রামীণ জীবনের যে কোনও ঘটনা বা দৃশ্যকে ঘিরে একটি আলোকচিত্র তুলবেন এবং তারপর সেই আলোকচিত্রটির থেকে একটি স্কেচ তৈরি করবেন। পারির উপর এই সিরিজের এটি পঞ্চম প্রয়াস। স্লাইডারটি কোনও একটি দিকে টানলে আলোকচিত্রটি অথবা স্কেচটি সম্পূর্ণ দেখতে পাওয়া যাবে

“আমি হলাম এক নকল সিংহম [সিংহ; যদিও এখানে পুলিশ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে], কিন্তু আমি আমার সন্তানদের প্রকৃত সিংহম হিসেবে গড়ে তুলব,” বলেন মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদ জেলার সমুদ্রওয়ানী গ্রামের বহুরূপী শিল্পী সুভাষ শিণ্ডে। বহুরূপীরা হলেন লোক শিল্পী, পরম্পরায় চলে আসা গল্পের কথক, যাঁরা নানান পৌরাণিক চরিত্রের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অভিনয় করেন; সাম্প্রতিককালে তাঁরা পুলিশ, আইনজীবী বা ডাক্তারের ছদ্মবেশ ধরে নিজেদের শিল্প প্রদর্শন করেন।

৩২ বছর বয়সী সুভাষ নাথপন্থী দাভারী গোসাভী সম্প্রদায়ের অধিবাসী; এটি একটি যাযাবর আদিবাসী সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের মানুষরা কর্মসংস্থানের তাগিদে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অভিবাসী হন। সুভাষ মহারাষ্ট্রের এক জনপদ থেকে অপর জনপদে (এবং কখনও কখনও মানুষের দুয়ারে দুয়ারে) ঘুরে ঘুরে তাঁর হাস্যরসাত্মক কবিতাগুলি পাঠ তথা অভিনয় করে দেখান – বিগত ২০ বছর ধরে তাঁর এই নিয়মের হেরফের হয় নি। তাঁর পরিবারের তিনি চতুর্থ এবং সর্বশেষ প্রজন্ম যাঁর হাতে শিল্পটি এখনও বেঁচে আছে। “আমার যখন ১২ বছর বয়স তখন থেকেই আমি এই কাজের জন্য ভ্রমণ করতে শুরু করি। আজকাল, বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যম এসে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে বহুরূপী শিল্প দেখার প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে, আপনি অতি সহজেই ইন্টারনেটে বহুরূপী পারফরম্যান্সের ভিডিও খুঁজে পাবেন - তাই কেউ আর ঐতিহ্যশালী শিল্প পয়সা খরচ করে দেখতে চায় না।”

সুভাষ শিশুকাল থেকেই তাঁর পরিবারের সঙ্গে অনবরত ভ্রমণ করতেন, এইজন্যেই তিনি কখনও প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণের অবকাশ পান নি, তিনি বলেন, “এমনকি স্কুলের একটা ধাপও চোখে দেখি নি।” প্রতিবেদনের সঙ্গের আলোকচিত্রটি কোলহাপুর জেলার রুই গ্রামের, এই গ্রামেই বর্তমানে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী হলুদ প্লাস্টিকে আচ্ছাদিত এক জীর্ণ তাঁবুতে থাকেন। তিনি অভিযোগের সুরে, তাঁর কষ্টের কথা জানান, “আমাদের কোন স্থায়ী নিবাস নেই, এবং এইভাবে রাস্তার পাশে তাঁবুতে দিনের পর দিন বেঁচে থাকা খুব কঠিন। আগে, আমরা আমাদের শিল্প প্রদর্শন করে অনুদান হিসেবে দর্শকদের কাছ থেকে কিছু শস্য পেতাম, কিন্তু আজকাল মানুষ আমাদের ১ থেকে ১০ টাকা নগদ দিয়ে বিদায় করেন – ফলে, দিন গেলে ১০০ টাকাও উপার্জন থাকে না।”

সুভাষের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে, তারা তাদের দাদু-দিদার সঙ্গে থাকে এবং তিনজনেই ওসমানাবাদ শহরে পড়াশোনা করে। সুভাষ চান না সন্তানেরা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করুক কারণ যে চরম দৈন্য এবং দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁর মত শিল্পীরা জীবন অতিবাহিত করছেন এবং “শিল্পের প্রতি মানুষের যে বিমুখতা” সেটা তাঁর সন্তানেরাও অনুভব করুক তা তিনি চান না। তিনি বলেন, “এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আমরা প্রদর্শন করি বলে আমরা মানুষের অপমান ও উপহাসের পাত্র। লোকজন আমাকে প্রায়শই বলে, হাস্যরসাত্মক কবিতা আবৃত্তি করে অর্থ ভিক্ষা করার পরিবর্তে আমি যেন কোনও ভদ্রস্থ কাজ করে অর্থ উপার্জনের রাস্তা দেখি।”

ছবি এবং স্কেচ: সংকেত জৈন

বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

Sanket Jain

Sanket Jain is a journalist based in Kolhapur, Maharashtra. He is a 2022 PARI Senior Fellow and a 2019 PARI Fellow.

Other stories by Sanket Jain
Translator : Smita Khator

Smita Khator is the Chief Translations Editor, PARIBhasha, the Indian languages programme of People's Archive of Rural India, (PARI). Translation, language and archives have been her areas of work. She writes on women's issues and labour.

Other stories by Smita Khator